ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম না জানলে যেসব ভয়ংকর ক্ষতি হতে পারে

আধুনিক সময়ের আর্থিক লেনদেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ক্রেডিট কার্ড। তবে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম না জানা বা অবহেলা করলে এর ক্ষতিকর প্রভাব আপনার আর্থিক জীবনে বড় ধাক্কা দিতে পারে। অনেকেই ক্রেডিট কার্ডকে একটি সুবিধা হিসেবে দেখে, কিন্তু এই সুবিধা ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম না জানলে তা আপনার জন্য পরিণত হতে পারে ভয়ংকর আর্থিক ঝুঁকিতে। এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সঠিক নিয়ম, ভুল ব্যবহারের ফলাফল এবং কীভাবে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে আর্থিক নিরাপত্তা বজায় রাখা যায়।
Table Of Contents
ক্রেডিট কার্ড কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে?
ক্রেডিট কার্ড হলো একটি প্লাস্টিকের বা ভার্চুয়াল কার্ড যা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আপনাকে নির্দিষ্ট অর্থ খরচের সুবিধা দেয়। এটি মূলত ঋণের মতো কাজ করে, যেখানে আপনার মাসিক ব্যয়ের মোট পরিমাণের একটি সীমা (ক্রেডিট লিমিট) নির্ধারিত থাকে। এই সীমার মধ্যে আপনি যেকোনো দোকান, অনলাইন বা অফলাইনে পেমেন্ট করতে পারেন।
প্রতি মাসে আপনার ব্যবহারের একটি স্টেটমেন্ট আসে, যেখানে মোট খরচ, সুদ, ফি এবং অন্যান্য চার্জের বিবরণ থাকে। স্টেটমেন্টের নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে পুরো বিল পরিশোধ করলে কোনো সুদ দিতে হয় না। এটিকেই বলে ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে যদি পুরো বিল না পরিশোধ করেন এবং শুধু মিনিমাম পেমেন্ট দেন, তাহলে বাকি অর্থের ওপর সুদ ধার্য হয়। এতে আপনার মূল ঋণের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
কেন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম জানা জরুরি?
সঠিক নিয়ম না জানলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অনেক সমস্যা হতে পারে। অনেক ব্যবহারকারী সচেতন না হয়ে খরচের বাইরে চলে যান, ফলশ্রুতিতে সুদ এবং জরিমানা সহ নানা ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এছাড়া, ক্রেডিট কার্ডের ভুল ব্যবহারে ক্রেডিট স্কোর নষ্ট হয়, যা ভবিষ্যতে লোন নেওয়া বা নতুন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে।
ঋণচক্রে আটকে যাওয়া, মানসিক চাপ, আর্থিক দুরবস্থা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবও এই ভুল ব্যবহারের পরিণতি। তাই সঠিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম জানা এবং মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ভুল পদ্ধতি ও তার ক্ষতি

ক্রেডিট কার্ড একটি অত্যন্ত সুবিধাজনক আর্থিক উপকরণ হলেও, এর ভুল ব্যবহারে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতি হতে পারে। নিচে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের কিছু সাধারণ ভুল পদ্ধতি এবং এর ফলে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. বিল সময়মতো পরিশোধ না করা
ক্রেডিট কার্ডের বিল নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পরিশোধ না করলে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।
- লেট ফি এবং উচ্চ সুদ: বিল পরিশোধে দেরি হলে ব্যাংকগুলো একটি নির্দিষ্ট লেট ফি ধার্য করে। এছাড়াও, অনাদায়ী বিলের উপর উচ্চ হারে সুদ (সাধারণত ২০% বা তার বেশি) আরোপ করা হয়, যা অন্যান্য ঋণের সুদের হারের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে মাসের শেষে মোট বিলের পরিমাণ অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যেতে পারে।
- ক্রেডিট স্কোর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া: বিল সময়মতো পরিশোধ না করলে আপনার ক্রেডিট স্কোরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটি আপনার আর্থিক শৃঙ্খলাহীনতার পরিচয় দেয় এবং ভবিষ্যতে ঋণ বা অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা পেতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
২. শুধুমাত্র মিনিমাম পেমেন্ট করা
আর্থিক চাপ বা অসচেতনতার কারণে অনেক গ্রাহক শুধুমাত্র ক্রেডিট কার্ডের মিনিমাম পেমেন্ট করে থাকেন। এটি একটি বড় ভুল যা দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর আর্থিক সমস্যা তৈরি করে।
- সুদের বোঝা বৃদ্ধি: যখন আপনি শুধুমাত্র মিনিমাম পেমেন্ট করেন, তখন বাকি বকেয়া অর্থের উপর সুদ ধার্য হতে থাকে। এর ফলে আপনার ঋণের পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে এবং একটি ঋণচক্রের (debt trap) সৃষ্টি হয়, যা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হতে পারে।
- দীর্ঘমেয়াদী ঋণ: মিনিমাম পেমেন্ট করার প্রবণতা ঋণ পরিশোধের সময়কালকে অনেক দীর্ঘ করে তোলে। এর ফলে আপনাকে অনেক বেশি সুদ পরিশোধ করতে হয় এবং আপনার প্রকৃত খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
৩. একাধিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার
একাধিক ক্রেডিট কার্ড থাকা মানেই অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়া। অনেকেই বিভিন্ন কার্ড থেকে ঋণ নিয়ে অন্য কার্ডের বিল পরিশোধ করার মতো ভুল করেন, যাকে “ক্রেডিট কার্ড জগলিং” বলা হয়।
- ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণহীন: একাধিক কার্ড ব্যবহারের ফলে ঋণের পরিমাণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কোন কার্ডে কত বিল বকেয়া আছে, তা মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে এবং বিল পরিশোধের তারিখগুলো গুলিয়ে যেতে পারে।
- আর্থিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি: এই অভ্যাস দ্রুত একটি বড় আর্থিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যেখানে আপনি শুধু এক ঋণ শোধ করতে অন্য ঋণ গ্রহণ করেন, যা আপনাকে আরও গভীর ঋণচক্রে ফেলে দেয়।
৪. অতিরিক্ত খরচের অভ্যাস তৈরি
ক্রেডিট কার্ডের সহজলভ্যতা অনেক সময় বাজেটের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত খরচ করার প্রবণতা তৈরি করে।
- “পরে পরিশোধ করব” মানসিকতা: ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পেমেন্ট সহজ হওয়ায় অনেকেই মনে করেন যে “পরে পরিশোধ করলেই হবে”। এই মানসিকতা আপনাকে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা এবং বাজেটের বাইরে খরচ করতে উৎসাহিত করে, যা শেষ পর্যন্ত আর্থিক অসুবিধার কারণ হয়।
- আর্থিক শৃঙ্খলার অভাব: ক্রেডিট কার্ডের যথেচ্ছ ব্যবহার আপনার আর্থিক শৃঙ্খলাকে দুর্বল করে দেয় এবং সঞ্চয়ের বদলে ঋণের দিকে ঠেলে দেয়।
৫. অনলাইন প্রতারণার ঝুঁকি
অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সময় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন না করলে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার শিকার হতে পারেন।
- ফিশিং এবং স্ক্যাম: প্রতারকরা ফিশিং ইমেইল বা স্ক্যাম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।
- কার্ড ডেটা চুরি: অনিরাপদ ওয়েবসাইটে বা পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে লেনদেন করলে আপনার কার্ডের ডেটা চুরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এর ফলে আপনার অজান্তেই কার্ড থেকে টাকা তুলে নেওয়া হতে পারে, যা কার্ড মালিককে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করে।
৬. ক্রেডিট স্কোর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
ক্রেডিট কার্ডের ভুল ব্যবহার আপনার ক্রেডিট স্কোরে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- আর্থিক নির্ভরযোগ্যতা হ্রাস: খারাপ ক্রেডিট স্কোর আপনার আর্থিক নির্ভরযোগ্যতা কমিয়ে দেয় এবং ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায়।
- লোন প্রাপ্তিতে সমস্যা: বিল সময়মতো পরিশোধ না করা, অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করা, বা ঋণের উচ্চ ব্যবহার (credit utilization) আপনার ক্রেডিট স্কোরকে খারাপ করে দেয়। একটি খারাপ ক্রেডিট স্কোর থাকলে ভবিষ্যতে বাড়ি কেনার জন্য মর্টগেজ, গাড়ি লোন, বা অন্য কোনো ধরনের লোন পেতে কঠিন হয়ে পড়ে, এমনকি সুদের হারও বেশি হতে পারে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার জানলে এটি আপনার আর্থিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিতে পারে। কিন্তু অসাবধানতা বা অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে এটি ঋণের বোঝাতে পরিণত হতে পারে। নিচে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
১. সময়মতো পুরো বিল পরিশোধ করুন
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো প্রতি মাসে আপনার পুরো বিল সময়মতো পরিশোধ করা। স্টেটমেন্ট পাওয়ার পর যে তারিখে বিল পরিশোধের শেষ সময় (due date) দেওয়া থাকে, তার আগেই সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ করে ফেলুন। এতে আপনাকে কোনো সুদ (interest) দিতে হবে না এবং আপনার ক্রেডিট স্কোর (credit score) ভালো থাকবে। যদি আপনি পুরো বিল পরিশোধ না করেন, তাহলে বকেয়া অর্থের ওপর উচ্চ হারে সুদ ধার্য করা হয়, যা আপনার ঋণের বোঝা বাড়িয়ে তোলে।
২. মিনিমাম পেমেন্টের ফাঁদ এড়িয়ে চলুন
ক্রেডিট কার্ড কোম্পানিগুলো সাধারণত বিলের একটি ক্ষুদ্র অংশ, যাকে মিনিমাম পেমেন্ট (minimum payment) বলা হয়, পরিশোধের সুযোগ দেয়। অনেকেই ভাবেন যে মিনিমাম পেমেন্ট করলেই যথেষ্ট। কিন্তু এটি একটি বড় ভুল। মিনিমাম পেমেন্ট করলে আপনার বকেয়া অর্থের ওপর প্রতিদিন সুদ যোগ হতে থাকে, যার ফলে ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং এটি পরিশোধ করতে অনেক বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। সর্বদা চেষ্টা করুন পুরো বিল পরিশোধ করতে, অথবা অন্তত মিনিমাম পেমেন্টের চেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে।
৩. কার্ডের সীমার (ক্রেডিট লিমিট) মধ্যে থাকুন
আপনার ক্রেডিট কার্ডের একটি নির্দিষ্ট ক্রেডিট লিমিট (credit limit) থাকে। এই সীমার বাইরে খরচ করা থেকে বিরত থাকুন। ক্রেডিট লিমিটের কাছাকাছি বা বেশি খরচ করলে এটি আপনার ক্রেডিট স্কোরকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে ক্রেডিট লিমিট অতিক্রম করলে অতিরিক্ত ফি (over-limit fee) দিতে হতে পারে। আপনার খরচের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন এবং ক্রেডিট লিমিটের প্রায় ৩০% এর নিচে খরচ করার চেষ্টা করুন।
৪. নিয়মিত স্টেটমেন্ট চেক করুন
প্রতি মাসে ব্যাংক থেকে পাঠানো ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট (credit card statement) ভালোভাবে পরীক্ষা করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনার করা সব লেনদেন সঠিকভাবে স্টেটমেন্টে উল্লেখ করা হয়েছে এবং কোনো অস্বাভাবিক বা ভুল লেনদেন (unauthorized or incorrect transactions) নেই। যদি কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়ে, তাহলে দ্রুত আপনার ব্যাংককে জানান। নিয়মিত স্টেটমেন্ট চেক করলে আপনি আপনার খরচের প্রবণতা সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
৫. অটোপে বা রিমাইন্ডার সেট করুন
বিল পরিশোধের শেষ তারিখ ভুলে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, যা সুদের বোঝা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এই সমস্যা এড়াতে আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অটোপে (autopay) সেট করতে পারেন, যাতে বিলের নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয়। অথবা, আপনার ফোনে রিমাইন্ডার (reminder) সেট করে রাখতে পারেন, যাতে বিল পরিশোধের শেষ তারিখের কয়েকদিন আগে আপনাকে সতর্ক করা হয়।
৬. নিরাপত্তায় সচেতন থাকুন
আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সুরক্ষিত রাখা অত্যন্ত জরুরি। নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চলুন:
- কার্ডের তথ্য কাউকে দেবেন না: ফোন বা ইমেইলে কার্ড নম্বর, CVV, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বা OTP (One Time Password) কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
- অনলাইনে নিরাপদ সাইট ব্যবহার করুন: অনলাইন কেনাকাটার সময় কেবল SSL এনক্রিপশনযুক্ত (HTTPS) এবং বিশ্বস্ত ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন। ওয়েবসাইটের ঠিকানায়
https://
আছে কিনা তা দেখে নিন। - এটিএম বা POS মেশিনে সতর্কতা: এটিএম বা পয়েন্ট অফ সেল (POS) মেশিনে কার্ড ব্যবহার করার সময় আপনার পিন (PIN) গোপন রাখুন এবং আশেপাশে কেউ দেখছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
- কার্ড হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে: দ্রুত আপনার ব্যাংককে অবহিত করুন এবং কার্ড ব্লক করান।
৭. একাধিক কার্ড ব্যবহারে সতর্কতা
প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত ক্রেডিট কার্ড নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। একাধিক কার্ড থাকলে খরচের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হতে পারে। যদি আপনার একাধিক কার্ড থাকে, তাহলে প্রত্যেকটি কার্ডের বিল এবং ব্যবহারের ওপর আলাদাভাবে নজর রাখুন। শুধুমাত্র প্রয়োজন অনুযায়ী একটি বা দুটি কার্ড ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
নতুন ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- প্রথমে ছোট লিমিটের কার্ড নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।
- মাসিক আয় এবং ব্যয়ের হিসাব রেখে কার্ড ব্যবহার করুন।
- EMI বা কিস্তিতে পেমেন্টের শর্তাবলী ভালোভাবে বুঝে সিদ্ধান্ত নিন।
- ব্যয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যয় এড়ান।
- ব্যালেন্স ট্রান্সফার বা ফেস্টিভাল অফার দেখে আকৃষ্ট না হয়ে সচেতন থাকুন।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম মেনে চলার উপকারিতা

ক্রেডিট কার্ড বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক লেনদেনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এর সঠিক ব্যবহার আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন সুবিধা পেতে সাহায্য করে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম মেনে চললে যে সকল উপকারিতা পাওয়া যায়, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. আর্থিক স্বাধীনতা এবং স্বাচ্ছন্দ্যে পেমেন্টের সুযোগ
ক্রেডিট কার্ড আপনাকে নগদ টাকা বহনের ঝামেলা থেকে মুক্তি দেয়। এর মাধ্যমে আপনি যেকোনো কেনাকাটা বা বিল পরিশোধ খুব সহজে করতে পারেন। এটি অনলাইন পেমেন্ট, বিদেশে কেনাকাটা এবং বড় অঙ্কের লেনদেনের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী, যা আপনাকে আর্থিক স্বাধীনতা উপভোগ করতে সাহায্য করে।
২. প্রয়োজনমতো জরুরি মুহূর্তে অর্থের সহজলভ্যতা
জীবনে অপ্রত্যাশিত খরচ আসতেই পারে, যেমন – চিকিৎসার খরচ, গাড়ির মেরামত বা অন্য কোনো জরুরি প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেডিট কার্ড আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থের জোগান দিতে পারে, যা আপনাকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখে।
৩. সময়মতো পেমেন্টের মাধ্যমে ভালো ক্রেডিট স্কোর অর্জন
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়মতো বিল পরিশোধ করা। নিয়মিত এবং সময়মতো বিল পরিশোধ করলে আপনার ক্রেডিট স্কোর উন্নত হয়। একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর ভবিষ্যতে বড় অঙ্কের ঋণ (যেমন – বাড়ি বা গাড়ির ঋণ) পেতে এবং কম সুদে ঋণ পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে।
৪. ফাইন্যান্সিয়াল ড্রেসার হিসেবে কাজ করে ভবিষ্যতে বড় লোন পাওয়ার সুযোগ
আপনার ক্রেডিট কার্ডের সঠিক ব্যবহার একটি ‘ফাইন্যান্সিয়াল ড্রেসার’ হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ, এটি আপনার আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দেওয়ার আগে আপনার ক্রেডিট হিস্টরি পর্যালোচনা করে। ভালো ক্রেডিট হিস্টরি থাকলে তাদের আস্থা অর্জন করা সহজ হয় এবং ভবিষ্যতে বড় ঋণ পাওয়ার পথ সুগম হয়।
৫. প্রতারণা ও চুরি থেকে সুরক্ষা
নগদ টাকার চেয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার অনেক বেশি নিরাপদ। যদি আপনার ক্রেডিট কার্ড চুরি হয়ে যায় বা বেহাত হয়, তাহলে দ্রুত ব্যাংকে জানিয়ে কার্ড ব্লক করে দিতে পারেন। এতে আপনার আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়াও, অনেক ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি জালিয়াতি বা প্রতারণামূলক লেনদেনের ক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রদান করে, যা আপনাকে অপ্রত্যাশিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
উপসংহার
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম জানা এবং সঠিকভাবে মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি না জানলে বা অবহেলা করলে সুদের বোঝা, ঋণচক্র, ক্রেডিট স্কোর খারাপ হওয়া, মানসিক চাপ ও আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। সুতরাং, সচেতন হয়ে কার্ড ব্যবহার করুন, বাজেট মেনে চলুন, এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা নিন। এইভাবে ক্রেডিট কার্ডকে একটি সঠিক আর্থিক সহযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।
কীওয়ার্ড: ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার, মিনিমাম পেমেন্ট, সুদের হার, বিল পেমেন্ট, ক্রেডিট স্কোর, ফাইন্যান্সিয়াল ডিসিপ্লিন, অনলাইন প্রতারণা, EMI, ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি, ইন্টারেস্ট ফ্রি পিরিয়ড, লেট ফি